
পৃথিবীতে প্রায় ৪ বিলিয়ন হেক্টর (১ হেক্টর=২.৪৭ এর) বনভূমি রয়েছে।
অর্থাৎ পৃথিবীর প্রায় ৩০ শতাংশ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে আছে বনভূমি। আজ থেকে
প্রায় ১১ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে কৃষির উদ্ভব হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত
প্রায় ৪০ ভাগ বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। এর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ বন উজাড়
হয়েছে গত দুই শতকে। মানুষ তাদের থাকার জন্য বসবাসযোগ্য স্থান, কৃষিকাজের
জন্য জমি, কলকারখানা স্থাপন, কাঠ ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় কারণে বনভূমি
উজাড় করছে। জাতিসংঘের এক জরিপের মাধ্যমে জানা গেছে, গত ৫ বছরে পৃথিবীর ৯
কোটি ১০ লাখ একর বন ধ্বংস হয়েছে।
পৃথিবীতে বনভূমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি রাশিয়ায়। এখানে মোট বনভূমির পরিমাণ
৩২ লাখ ৮৭ হাজার ২৪৩ বর্গমাইল। বনভূমির দিক থেকে পৃথিবীর শীর্ষ দশটি দেশ
হলো : রাশিয়া ৩২,৮৭,২৪৩ বর্গমাইল, ব্রাজিল ২১,০০,৩৫৯ বর্গমাইল, কানাডা
৯,৪৪,২৯৪ বর্গমাইল, যুক্তরাষ্ট্র ৮,৭২,৫৬৪ বর্গমাইল, চীন ৬,৩১,২০০
বর্গমাইল, অস্ট্রেলিয়া ৫,৯৬,৬৭৮ বর্গমাইল, কঙ্গো ৫,২২,০৩৭ বর্গমাইল,
ইন্দোনেশিয়া ৪,০৫,৩৫৩ বর্গমাইল, অ্যাঙ্গোলা ৪,০৫,৩৫০ বর্গমাইল এবং পেরু
২,৫১,৭৯৬ বর্গমাইল
এই শীর্ষ দশ দেশের বনভূমি ছাড়াও পৃথিবীতে এমন অনেক বিখ্যাত বনভূমি রয়েছে
যা দেশের নামে নয় বরং নিজ নামেই সুপরিচিত। বর্তমানে পৃথিবীর বনভূমিগুলোর
মধ্যে রেইনফরেস্ট সবচেয়ে জনপ্রিয়। পৃথিবীর অধিকাংশ রেইন ফরেস্টেরই
বিস্তার কয়েকটি দেশজুড়ে, যেমন : আমাজন রেইনফরেস্ট কলাম্বিয়া, ইকুয়েডর,
পেরু, বলিভিয়া, ব্রাজিল, ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম, ফ্রেঞ্চ গায়ানা,
আর্জেন্টিনা, এক কথায় দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে
আছে। কিছুদিন আগে বিখ্যাত এক সংবাদ মাধ্যম পৃথিবীর শীর্ষ দশটি রেইন
ফরেস্টের তালিকা করেছে। এগুলো হলো:
মানু রেইন ফরেস্ট:
.
পেরু আমাজানকে পৃথিবীর রেইন ফরেস্টগুলোর রানী বলা হয়, আর মানু রেইন ফরেস্ট
হচ্ছে সে রানীর মাথার মুকুট। আমাজন বনভূমির যে অংশটুকু পেরুর মধ্যে পড়েছে
সেটিকে বলা হয় মানু রেই ফরেস্ট। এ অংশেই আমাজন বনভূমির শ্রেষ্ঠ
সম্পদগুলোর মেলে।
বিন্দি ন্যাশনাল পার্ক উগান্ডা:
আফ্রিকার পশ্চিমাংশে এ গহিন অরণ্য অবস্থিত। বলা হয়ে থাকে যেই এ অঞ্চলে
সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না। পৃথিবীতে যত গরিলা আছে এর অর্ধেকই এ
অরণ্যে বাস করে। ধারণা করা হয় বর্তমানে এ প্রজাতির প্রাণীর মাত্র ৬০০
সদস্য বেঁচে আছে।
ফ্রেজার আইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া:
এটি বালুভূমি দিয়ে গঠিত পৃথিবীর একমাত্র বনভূমি যা অস্ট্রেলিয়ার
কুইনসল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে ৭০ মাইল দীর্ঘ এক অরণ্য দ্বীপ। ভয়ঙ্কর বন্য
কুকুর 'ডিঙ্গো' এ অরণ্যেই বাস করে। প্রায় ২৫০ প্রজাতির পাখির আবাস স্থল এ
অরণ্য।
তালমানকা রেইন ফরেস্ট:
কোস্টারিকা ও পানামা উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ এবং প্রশান্ত ও
আটলান্টিক মহাসাগরের মিলনকেন্দ্রে তালমানকা রেইন ফরেস্টের অবস্থান। এ
অরণ্যটির এক অংশ কোস্টারিকা আর অপরটি পানামায় অবস্থিত।
মাউন্ট কুক ন্যাশনাল পার্ক, নিউজিল্যান্ড :
এটি পৃথিবীর এমন এক স্থান, যেখানে ধীরগতিতে নেমে আসা হিমবাহের পাশেই রয়েছে
উষ্ণ বনভূমি। মাউন্ট কুক ন্যাশনাল পার্ক এরকম বনভূমি যার মধ্য দিয়ে
অসংখ্য উষ্ণ ঝরনা বয়ে চলেছে।
সেপিক রেইন ফরেস্ট, নিউগিনি :
নিউগিনির পুরো দ্বীপজুড়ে ছড়িয়ে আছে নানা ধরনের জীব এবং উদ্ভিদ। এ জন্য
পুরো দ্বীপটিকে রেইন ফরেস্ট বললে ভুল হবে না। এখানে ভিন্ন জাতের ৩৮টি
বার্ডস অব প্রারাডাইস বাস করে।
হোহ্ রেইন ফরেস্ট, যুক্তরাষ্ট্র :
আমেরিকার রাজধানীর বুকে অবস্থিত এ রেইন ফরেষ্টের কথা অনেকের কাছে অজানা।
স্যাঁতসেঁতে এ জঙ্গলের গড় বৃষ্টিপাত বছরে ২৫০ ইঞ্চি। যার ফলে পৃথিবীর অন্য
যে কোনো বনাঞ্চল থেকে এখানকার গাছপালা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
কাকুম ন্যাশনাল পার্ক, ঘানা :
পশ্চিম আফ্রিকার এ বনাঞ্চলটি শুধু জীববৈচিত্র্যেই ভরপুর নয়, এটি বহু
বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর আবাসভূমি। এদের মধ্যে মোনা-মিরক্যাট, বামনহাতি এবং
বুনো মেষ অন্যতম। এছাড়াও এখানে রয়েছে আরো বহু বিচিত্র ধরনের পাখি।
বাতায় আই ন্যাশনাল পার্ক, মালয়েশিয়া :
এ গ্রীষ্মমণ্ডলী বনটি পূর্ব মালয়েশিয়ার বোর্নিও দ্বীপে প্রায় ২৪০ বর্গ
কি.মি. এলাকা নিয়ে গড়ে উঠেছে। এ বনের মধ্যে ২৪ কি.মি. দীর্ঘ একটি কৃত্রিম
হ্রদ রয়েছে। এ বনাঞ্চলে ওরাং ওটাং, গিবন বানর, বিভিন্ন প্রজাতির ধনেশ
পাখিসহ বেশ কিছু প্রজাতির বিপন্ন প্রাণী বাস করে।
মাদিদি ন্যাশনাল পার্ক, বলিভিয়া :
বলিভিয়ার উত্তর-পশ্চিম দিকে ৪৭ লাখ একর জায়গাজুড়ে এ রেইন ফরেস্ট
বিস্তৃত। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তিন আঙুলের স্লথ, মাকড়সা,
বানর, আজব চেহারার পেকারি অন্যতম।
এছাড়াও পৃথিবীতে আরো অসংখ্য ছোট-বড় বনভূমি রয়েছে। প্রতিটি বনভূমিই
পৃথিবীর অমূল্য সম্পদ। পৃথিবীকে এবং অগণিত প্রাণী ও উদ্ভিদকে বাঁচাতে হলে
আমাদের এসব বনভূমিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
Posted by BIKRAM
No comments:
Post a Comment